প্রাচীনকাল থেকেই সাতকানিয়া উপজেলার জনগন ক্রীড়ামোদী। বলি খেলার ঐতিহ্য এ অঞ্চলে অতি সুপ্রাচীন থেকেই- মক্কার বলিখেলা সোনাকানিয়াতে অনুষ্টিত হয়।
বিভিন্ন জেলা থেকে খেলায় অংশগ্রহণ করতে প্রতিযোগিদের আগমন ঘটে। সাধারণত বৈশাখ মাসকে কেন্দ্র করেই মেলাসহ এই খেলার আয়োজন চলতে থাকে।
দেশীয় পণ্য, কুটির শিল্প, বাঁশ-বেতের তৈরী আসবাবপত্রসহ হরেক রকমের মিষ্টির পসরা বসে এতে।
তাছাড়া সারা বছর ধরে কোন না কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। দেশীয় খেলা হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, দাড়িয়াবান্ধার পাশাপাশি জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবলের আধিপত্য দেখা যায়।
সাতকানিয়ায় বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারী কলেজ খেলার মাঠ এবং সাতকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ -উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুরনামেন্ট, ১ম ও ২য় বিভাগ ফুটবল লীগ, বয়সভিত্তিক/স্কুল ও কলেজভিত্তিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা বিভিন্ন বয়সী ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অনুষ্টিত হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মক্কার বলিখেলা সর্ম্পকিত আরো জানুন:-
রেসলিং বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি বিনোদন। রেসলিং এর বাংলা নাম কুস্তি। কুস্তি অনেক পুরাতন একটি খেলা। মধ্যপ্রাচ্যে এই খেলাটির একসময় ব্যাপকজনপ্রিয়তা ছিল। বর্তমানে অলিম্পিক সহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়কুস্তি একটি অন্যতম ইভেন্ট। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মতো বাংলাদেশেও কুস্তি খেলার রয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এর রয়েছে বিশেষ একটি মর্যাদা।
চট্টগ্রামে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ তারিখে উৎসব মুখরপরিবেশে কুস্তি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। যাকে বলা হয় মক্কার বলি খেলা।
বলি শব্দটি এসেছে বলবান থেকে। মুঘলআমলেবিত্তবান এবং ভূ-স্বামীরা নিরাপত্তা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য বেতনভোগীনামীদামীকুস্তিগিরপুষতেন। তাদের দৈহিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হতোবলী খেলারমাধ্যমে। যে বলবান কুস্তিতে বিজয়ী হতেন তাকে বলী বলা হতো। বলী খেলারস্বর্ণযুগ ছিলপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল পর্যন্ত। সে সময়চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বলী খেলারআয়োজন করাহতো। তখন এ অঞ্চলের অনেকেই ছিলেন ইয়াঙ্গুনতথা মিয়ানমার প্রবাসী। তাদের বলাহতো রেঙ্গুইন্যা। রেঙ্গুইন্যাদের হাতে ছিল প্রচুর অর্থ ফলেতারাই ছিলবলী খেলারপ্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তীকালে রেঙ্গুইন্যা ছাড়াও প্রথিতযশা অনেকব্যক্তি বলী খেলারপৃষ্ঠপোষকছিলেন। ঢাকার নবাব আবদুল গনিও বলী খেলারএকজনপৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে একটি সময় পৃষ্ঠপোষকের অভাবে বলী খেলারধুমধাম অনেকজায়গায় স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।
বর্তমানে চট্টগ্রামের বলী খেলাকে জব্বারের বলী খেলা এবং মক্কার বলী খেলা বলা হয়।
চট্টগ্রামে প্রচলিত বর্তমানের বলী খেলার প্রবর্তক ছিলেন আব্দুল জব্বার নামের এক সওদাগর। তার সেই নামানুসারে বর্তমানে এই খেলাকে জব্বারের বলী খেলা বলা হয়। আবদুল জব্বার ছিলেননগরীর বদরপাতি এলাকারতৎকালীন প্রভাবশালী সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী । তার লক্ষ্য ছিলব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকেসংগঠিত করা, প্রেরণা দেওয়াএবং সংগ্রামী করে গড়ে তোলা।১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ, বাংলা ১৩১৫ সালের ১২ বৈশাখ আবদুল জব্বার প্রথম এই বলী খেলার সূচনা করেন। তিনি থাকতেন এই খেলার সভাপতি।
বর্তমানে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লাল দীঘি ময়দানে। বলী খেলার পূর্বে ঢোল বাজিয়ে প্রচারকার্য চালানোহয়। বলীরা প্রতিযোগিতায়অংশ গ্রহণ করে সঙ্গী ও সমর্থকদের নিয়ে ঢোল বাজানোর মধ্য দিয়ে।প্রতিযোগিতা চলে কয়েক পর্বে, চূড়ান্ত পর্বে যিনি বিজয়ী হন তাকে সে বছরে বলী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। খেলা শেষে বিজয়ীকে মাথায় নিয়ে তার সমর্থকরা ঢোলবাজিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়। বর্তমানে এই খেলায় যুবকেরাও অংশ নিয়ে থাকে। বর্তমানে বলী খেলা এতটাই জনপ্রিয় যে খেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশের প্রায় তিন কিলোমিটারএলাকা জুড়েবৈশাখী মেলারআয়োজন করা হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্যবিক্রয়কারীরা আগমন করে থাকেন।
চট্টগ্রামের অধিবাসীরা প্রতিবছর জব্বারের বলী খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ এই বলী খেলা বা কুস্তি খেলা দেখে তারা খুবই আনন্দ পান। এটা চট্টগ্রাম বাসীরজন্য একটি বিশেষ বিনোদন। জব্বারের বলী খেলা এখন চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
তথ্য সংগ্রহে: মহিউদ্দীন, উপজেলা টেকনিশিয়ান, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।